নবম অধ্যায়
পর্বঃ
সুখ
শুক্রবার, ২রা জুলাই ২০১৮ দুপুর ৩-টার মতো বাজে । কিন্তু শ্রাবনের মেঘ প্রকৃতিকে এক অন্ধকার মায়ায় ঢেকে রেখেছে । তাই সন্ধার মতোই মনে হচ্ছে ।
তেমন কনো কাজ ছিলো না বলে অবসর সময়ে নিত্যদিনের মতোই আজও বসে বসে কম্পিউটারে দাবা খেলছিলাম । এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠলো । দড়জা খুলতেই দেখি রফিক । রফিক হলো আমার খুবই প্রিয় একজন ছাত্র ।
কিন্তু রফিকের চেহারা দেখতেই বুঝতে পাড়লাম নিশ্চয় দুঃখের কোন সংবাদ আছে । চোখ লাল হয়ে আছে , মুখটা কেমন যেনো একটু ফুলে আছে । বোধ হয় অনেক কান্না করেছে । যাহোক আমি স্বাভাবিক-ই আচরন করলাম ।
– ও রফিক, ভেতরে এসো ।
এবার কম্পিউটারের সামনে আমি না বসে রফিক কে বললাম,
-রফিক, তুমি আমার দাবা খেলাটা শেষ কর । আমি তোমার জন্য আর আমার জন্য কফি নিয়ে আসছি ।
রফিক কে কম্পিউটারের সামনে বসিয়ে আমি কফি আনতে গেলাম । ফিরে এসে জিজ্ঞেস করলাম
-কি অবস্থা, জিতেছো ?
রফিক আস্তে করে বললো
-জী, স্যার ।
কফির কাপ টা রফিক কে দিয়েই জিজ্ঞেস করলাম
-আজকের পত্রিকা পড়েছো ?
-না স্যার, পড়া হয়নি ।
-বাহ, আমারও পড়া হয়নি । তাহলে এই নাও তুমি ”প্রথম আলো ” পড়, আমি “ডেইলি স্টার” পড়ি । কফির সাথে পত্রিকা পড়া জমবে ভালো ।
কিছুক্ষন পরেই রফিক খুব আক্ষেপ নিয়ে বলে উঠলো
-স্যার, এভাবে কি একটা দেশ চলতে পারে ?
-কেনো রফিক, কি হয়েছে ?
-স্যার, পত্রিকা খুলতেই দেখি “পাঁচ বছরের শিশু কে ধর্ষণের পর হত্যা , ঘুষ না নেয়াতে সরকারি প্রকৌশলী খুন, দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকে প্রান গেলো ২০ জনের” । আপনি-ই বলুন এভাবে কি কোন দেশে স্বাভাবিক জীবন যাপন সম্ভব ?
-হুম্ম, তুমি ঠিকই বলেছো এভাবে কোন দেশ চলতে পারে না ।
কিছুক্ষন সময় যাওয়ার পর আমি রফিক কে জিজ্ঞেস করলাম
-আচ্ছা রফিক, তুমি কান্না করেছিলে কেনো ? তা তো বললে না ।
রফিক আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো
-স্যার আপনি জানতেন আমি কান্না করেছিলাম ?
-হ্যা, তোমাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিল ।
-তাহলে স্যার আপনি আগে জিজ্ঞেস করলেন না কেনো ?
-আগে বলো তুমি কান্না কেনো করেছিলে ?
-স্যার, রেজাল্ট দিয়েছে ফাস্ট , সেকেন্ড কোনটাই হতে পারিনি ।
-এখন বলো তুমি যখন রেজাল্ট দেখেছিলে, এমনকি আমার বাসার দড়জায় আসা পর্যন্ত তোমার মনের অবস্থা কেমন ছিলো ? আরা এখন কেমন লাগছে ?
-স্যার, তখন খুবই দুঃখ পেয়েছিলাম । সেজন্য খুব বিষণ্ণও ছিলাম । কিন্তু এখন নিজেকে স্বাভাবিক ই মনে হচ্ছে ।
-তাহলে এখন বলো কেনো এমন মনে হচ্ছে ?
আমার জিজ্ঞাসার পর রফিক ভাবতে শুরু করলো । আর প্রায় এক মিনিট পর বলে উঠলো
-” ব্যাক্তি যখন মনে কেবল আপন দুঃখকে ধারন করে, তা ক্রমেই ব্যাক্তিকে দুর্বল করে তোলে । আর ব্যাক্তি যখন মনে সমাজের দুঃখকে ধারন করে, তা ক্রমেই ব্যাক্তিকে শক্তিশালী করে তোলে ।”